শহীদ আবু সাঈদের শেষ ভিডিও ও কিছু কথা

Published by hasanenam on

পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ শহীদ হওয়ার পর ১৭ই জুলাই চ্যালেন 24 একটি ভিডিও প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায় মাথায় পতাকা বেঁধে আবু সাঈদ মিডিয়ার সামনে কথা বলছেন। সেদিন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে অবস্থান কর্মসূচী ছিল রংপুরে। আবু সাঈদ ছিলেন রংপুরের সমন্বয়ক। ছাত্রলীগ আগেই জানিয়ে দিয়েছিল এই কর্মসূচী করতে দেয়া হবে না। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পদযাত্রা করার জন্য বলা হয় অবস্থান কর্মসূচীর পরিবর্তে। আবু সাঈদরা সেটাই মেনে নিয়েছিল। এরপর তারা মিছিল নিয়ে আগাতে থাকলে ছাত্রলীগ ও শিক্ষকরা (সম্ভবত প্রক্টোরিয়াল টিম) মিছিলেও বাঁধা দেয়। শিক্ষকদের উপরও হামলা করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে আবু সাঈদ কথা বলছেন।

ভিডিওটা কয়েকবার দেখার পর কিছু জিনিস নোট করলাম।

১. আবু সাঈদ খুব ভীত ছিলেন তখন। তার কথা বারবার আটকে যাচ্ছিল।

২. তিনি প্রথমে ছাত্রলীগের নাম উচ্চারণ করার সাহস পাননি। বলছিলেন একটি ছাত্র সংগঠন। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন ছাত্রলীগের কথা।

৩. শিক্ষকদের উপর চড়াও হয়েছিল সম্ভবত ছাত্রলীগ। কিন্তু আবু সাঈদ সেটা বলার সাহস পাননি। তিনি বলেছেন তৃতীয় পক্ষ।

৪. তার ভয়ের কারণও স্পষ্ট হয় খানিক পর। আবু সাঈদ বলেন ছাত্রলীগ সভাপতি তাকে চড় থাপ্পড় মেরেছে।

৫. আবু সাঈদ কথা বলার সময় পিছনে ছাত্রলীগের কর্মীরা শ্লোগান শুরু করে। এতে করে আবু সাঈদের গলার স্বর আরো নিচু হয়ে যায়।

সম্ভবত এই ভিডিও যেদিন প্রকাশ করা হয় তার এক বা দুইদিন পর শহীদ হন তিনি। তার বুক চিতিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার ছবি আমরা চোখ বুজলেই দেখতে পাই। মাত্র দুইদিন আগেই যে ছেলেটা এভাবে কথা বলছিল, সে কিভাবে রাতারাতি পরিবর্তন হয়ে গেলো? আপনি যদি ভালো করে এই সময় পরিক্রমাটা পর্যবেক্ষণ করেন তাহলে বুঝতে পারবেন শহীদ আবু সাঈদই পুরো বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের প্রতিচ্ছবি। ছাত্রলীগ যে জুজুর ভয় তৈরি করে রেখেছিল তাদের পেশী শক্তি আর ক্ষমতা দিয়ে, সেই ভয় ভেঙে যেতেই কাঁপন ধরেছে মসনদে। ওদের ওই বাহাদুরি যে নিছক ফাঁপা সেটা বুঝতে আমাদের দেরি হয়ে গেছে। অনেকগুলো প্রাণ ঝরে গেছে।

তবে সময় ফুরায় নাই। এই ভিডিওটা আমাদের মনে রাখতে হবে। আমাদের ইয়াদ রাখতে হবে, পুলিশ গুলি করার আগে ছাত্রলীগ আমার ভাইকে মেরেছে, মানসিক নির্যাতন করেছে। এই ছাত্রলীগকে আমরা সর্বাত্মকভাবে বর্জন করবো। ওরা আমার ভাইয়ের খুনী। ইনিয়ে-বিনিয়ে যে যত কথাই বলুক, এখনও যে ছাত্রলীগ করবে, ছাত্রলীগের পক্ষে কুসুম কুসুম কথা বলবে সে খুনি। শিক্ষা, ছাত্রলীগ ; একসাথে চলে না। যাদের হাতে আমার ভাইয়ের রক্ত তাদের কখনই আমরা মাফ করবো না, কখনই না।


0 Comments

Leave a Reply

Avatar placeholder

Your email address will not be published. Required fields are marked *