দোয়েল পাখির নোট
দ্বিতীয় প্রশ্নের মাঝখানে খানিকটা সময় নিলেন বিচারক। ছোট করে ‘হাসবুক’ বলে সামনে থাকা কিছু একটা টেনে নিলেন তিনি। বোতল নাকি পানির মগ? মগের ভেতর কী আছে, পানি নাকি কফি? খানিকটা দূরে প্রতিযোগীর আসনে বসে থাকা বাঙালি কিশোরের চোখে সবকিছু ঝাপসা ঝাপসা লাগে। বিচারকরা নিজেদের ভেতর নিচু গলায় কি যেন বলে, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোফোন মারফত সেসব কথাও শুনতে পায় সে বাঙালি কিশোর। কিন্তু কিছুই বুঝে আসে না তার। যেমন সে বুঝতে পারে না কীভাবে চলে এসেছে এই আলো ঝলমলে বলরুমে। এখানে কী কখনও আসার কথা ছিল তার? বাঙালি কিশোর নিজ আসনে আরও কিছুটা গুটিসুটি মেরে বসে। যেন বা শীতের রাতে মাদরারাসার বারান্দায় কোরান পড়তে বসেছে সে। খানিক বাদেই জেগে উঠবে সহপাঠীরা, এই ফাঁকে যতটা সম্ভব নিজেকে এগিয়ে নেয়া যায়। নিজেকে এগিয়ে নেয়ার ছলে কখন যে নোনা জলের সমুদ্র পার হয়ে এখানে এসে বসেছে সে, বুঝতেও পারেনি। চোখ কী কিছুটা ঢুলু ঢুলু তার?
নিজেদের ভেতর কথা শেষ করে তৃতীয় প্রশ্নটি করার প্রস্তুতি নেন বিচারক। মোট পাঁচটি প্রশ্ন করা হবে। বাঙালি কিশোরের ইচ্ছে করে দুই হাত দিয়ে চোখ দুটো ভালো করে কচলে ঘুম দূর করতে। কিন্তু আশপাশে বসিয়ে রাখা যান্ত্রিক চোখগুলোর কারণে সেটা আর হয়ে উঠে না। নিচ দিকে তাকিয়ে সটান হয়ে বসে থাকে সে। আদৌ ঘুম আসছে তার? নাকি পুরোটাই আড়ষ্টতা। প্রশ্ন করেন বিচারক। বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, ফাসা-হামা ফাকা-না মিনাল মুদ হাদীন…
মুহূর্তেই সব আড়ষ্টতা ভেঙে যায় তার। চোখের সামনে ভেসে উঠে অফসেট পেপারের একটি কোরআনের ছবি। যেই কোরআনটি কিনে দিয়েছিল তার বাবা, মক্তবে থাকতে। লাল নীল লোকমার কাগজের ভিড়ে সে খুঁজে পায় তেইশ নম্বর পারার দশ নাম্বার পৃষ্ঠার চার নম্বর লাইন। দরাজ কণ্ঠে তেলাওয়াত শুরু করে সে। চোখের সামনে ভেসে উঠতে থাকে একের পর এক আয়াত। লম্বা নিঃশ্বাস টেনে টেনে পৃথিবীর সকল আড়ষ্টতা ভেঙে ভেঙে সেগুলো নিজ কণ্ঠে পুনরাবৃত্তি করতে থাকে সে। চার হাজার কিলোমিটার দূরে বসে ঐন্দ্রজালিক সে সুরের মূর্ছনায় হেচকি তুলে কাঁদতে থাকে আনোয়ারা বেগম। সম্পর্কে তিনি এই কিশোরের মা। কিশোরের নামটিও বলা দরকার। ধরা যাক তার নাম রায়হান।
আনোয়ারা বেগম এসেছেন তার ছোট বোনের বাসায়। এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে রায়হান বলেছিল মোবাইলে নাকি দেখা যাবে কাতারে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা। আনোয়ারা বেগমের ছোট একটা মোবাইল আছে বটে, তবে সেখানে কেবল কথা বলা যায়। ক্যালেন্ডার আর ঘড়ির সময় ধরে তাই বোনের বাসায় চলে এসেছে সে। ছোট বোনের জামাই রাসেলের টাচ মোবাইলে ছেলের তেলাওয়াত দেখছে সে। আঁচলটা দাঁতে চেপে হু হু করে কেঁদে উঠেন আনোয়ারা। পাঁচটা প্রশ্নের তিনটেই রায়হান কোনোরকম সমস্যা ছাড়া বলে ফেলেছে, আর বাকি দুটো। এরপরেই কী ঘুচে যাবে যাবতীয় দুঃখ…মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করতে থাকে সে। আমার সোনামানিক ছেলে, একদম ভয় করা যাবে না। সাহস রাখো, সাহস রাখো…বিড় বিড় করে বলে আনোয়ারা।
মায়ের কথা কী পৌঁছায় রায়হানের কান অব্দি? হয়তো পৌঁছায়, হয়তো না। আমরা দেখতে পাই তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর শেষ করার পর কেটে গেছে তার সবরকমের আড়ষ্টতা। এবার সে আগের থেকে অনেক বেশি ঝলমলে। বড় হলরুমের একদম শেষ প্রান্তের জিনিসও তার চোখে পড়ে, একদম স্পষ্ট। শেষ সারিতে বসে তার দিকে তাকিয়ে থাকা ক্বারী আমিনুল ইসলামের স্থির দুটো চোখ পড়তে পারে রায়হান।
ক্বারী আমিনুল ইসলামের প্রতিষ্ঠিত আল মাদরাসাতু তালিমুল কোরআনের ছাত্র রায়হান, হাফেজ আবু রায়হান। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি হিফজ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে এখন কাতারে এসেছে সে, মূলত আনা হয়েছে। গত রমজানে রায়হানের তেলাওয়াত শোনার পর এক বিচারক বলেছিলেন, ‘অপ্রতিরোধ্য, তুমিই বাংলাদেশ।’ রায়হান তখনও জানত তাকে নিয়ে কাতারে আসার বন্দোবস্ত প্রায় করে ফেলেছে ক্বারী আমিনুল ইসলাম। আল মাদরাসাতু তালিমুল কোরআনের ছাত্ররা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে এখন আলোচনার শীর্ষে চলে এসেছে। দেশের টিভি চ্যানেলগুলোর প্রতিযোগিতার প্রায় পুরোটাই দখল করে আছে তার ছাত্ররা। সৌদি রিয়াল, কাতারি রিয়াল, কুয়েতি দিনার, মিশরি পাউন্ড, ইরানি রিয়াল, তুর্কি লিরা বছরে বছরে আসছে পকেটে। আমিনুল ইসলামের এবারের রেসের ঘোড়া রায়হান। বেশ কষ্টে অর্জিত এই ঘোড়া। পোষ মানাতে বেগ পোহাতে হয়েছে। মাইক্রোফোনে চতুর্থ প্রশ্ন করার প্রস্তুতি নেয় বিচারক। রায়হান নিচ দিকে তাকিয়ে।
বিচারক প্রশ্ন করেন এবার সুরা আনআম থেকে। সাত নম্বর পারার ষোলো নম্বর পৃষ্ঠা, কওলুহুল হাক্ব…
রায়হানের স্মৃতিতে এবার কী যেন হয়। সাত নম্বর পারার সবগুলো পৃষ্ঠা পেলেও ষোলো নম্বর পৃ্ষ্ঠাটা খুঁজে পায় না সে। কেমন যেন ঝাপসা ঝাপসা লাগে। লম্বা দম নিয়ে তেলাওয়াত শুরু করার প্রস্তুতি নেয় রায়হান। হুট করেই তখন চোখের সামনে ভেসে উঠে মুহিব্বুল্লাহ হুজুরের কথা। হঠাৎ উনার ছবি কেন ভেসে উঠছে? রায়হানের ঝাপসা একটা স্মৃতি মনে পড়ে। এই পৃষ্ঠাটা সবক দিয়েছিল সে মুহিব্বুল্লাহ হুজুরের কাছে।
রায়হান যখন খুব ছোট তখন ওর বাবা মারা যায়। রায়হানকে দুই মাস বয়সে দেখে সৌদিতে লেবার ভিসায় গিয়েছিল সে। আর ফিরে আসেনি। আনোয়ারা বেগম স্বামীর মৃত্যুর পর কিছুদিন শ্বশুরবাড়িতে থাকলেও একসময় বাপের বাড়ি চলে আসতে হয়। বাবা ভাইদের পরামর্শেই খুব ছোটবেলাতে রায়হানকে দেয়া হয় সোবহানপুর হাফেজিয়া মাদরাসায়। খুলনার ছোট্ট এক গ্রামের সেই মাদরাসাতেই মুহিব্বুল্লাহ হুজুরের কাছে বেড়ে উঠতে থাকে রায়হান। হুজুর প্রায় বলত, তোকে আমি বিশ্বমানের হাফেজ বানাব রায়হান। তুই শুধু আমার কথা মতো চল, পিছনের পড়াগুলো ঠিকঠাক ইয়াদ রাখ। আগামী সপ্তাহে ঢাকা গেলে একটা মশকের ক্যাসেট নিয়ে আসব।
রায়হান কেবল মাথা নাড়ত হুজুরের কথায় আর মুশাব্বার আয়াতগুলো আসলে লিখে রাখতো ছোট একটা খাতায়। রায়হান চতুর্থ প্রশ্নের জন্য তেলাওয়াত শুরু করে চার পাঁচ আয়াত পড়ে ফেলে। কিন্তু তখনও ষোলো নম্বর ঝাপসা ঝাপসা লাগে। কোনোকিছু স্পষ্ট হয় না। ভয় লাগতে শুরু করে রায়হানের। মনে হয়, এই প্রশ্নটার উত্তর ঠিকঠাক দিতে পারবে না। সবকিছু অন্ধকার অন্ধকার লাগে। চোখের সামনে কেবল ভেসে উঠতে থাকে মুহিব্বুল্লাহ হুজুরের মুখ।
অবচেতন মনে রায়হান খুঁজতে থাকে কেন সে চোখের সামনে ভাসাতে পারছে না এই পৃষ্ঠাটা। কেন বার বার ভেসে উঠছে হুজুরের মুখ। রায়হান হিফজ শেষ করেছে মুহিব্বুল্লাহ হুজুরের কাছেই। মা আনোয়ারা বেগম ভাগ্য অন্বেষণে ঢাকায় চলে এসেছিল। মাস কয়েক পর পর বাপের বাড়ি গিয়ে দেখে আসত ছেলেকে। নানাবাড়ির ঠিক পাশেই ছিল সোবহানপুর হাফেজিয়া মাদরাসা। সকাল বিকাল মামা খালাদের চেহারা দেখার কারণে কোনোদিনই মায়ের শূন্যতা সেভাবে অনুভব করেনি সে।
হিফজ শেষ করার পর একদিন আনোয়ারা বেগম সোবহানপুর গিয়ে ছেলেকে নিয়ে আসেন ঢাকায়। চিড়িয়াখানা দেখানোর জন্য। মুহিব্বুল্লাহ হুজুর বলেছিল, বেশিদিন ছুটি না কাটাতে। সবক শেষ করার পর যত দ্রুত শুনানি শুরু করা যায়। হুজুরের মতে সবক শেষ করা মানেই হাফেজ হওয়া না। এক বসায় শুনাতে হবে পুরো কোরআন শরিফ। তাহলেই তোমাকে হাফেজ বলা হবে। এক বসায় পুরো কোরআন শোনানোর মানসিক প্রস্তুতি হিসেবে মায়ের সাথে ঢাকা বেড়ানোর ছুটি দিয়েছিল হুজুর।
গোলগাল টুপি-পাঞ্জাবি আর সুন্দর চেহারার রায়হানকে দেখে বাস কাউন্টারের ভেতর এক বয়স্ক লোক জিজ্ঞেস করেছিল রায়হান হাফেজি পড়ে কি না। গর্বে চউড়া হওয়া বুক আর প্রশস্ত কপাল নিয়ে আনোয়ারা বেগম বলেছিল, পড়ে বলতে শেষ। এই কয়েকদিন আগে পড়া শেষ হয়ে গেছে। আমি ওর মা। লোকটা তখন বলেছিল, একটু পড়ে শুনাও তো বাবা। চোখ মুখ বন্ধ করে তেলাওয়াত শুরু করেছিল রায়হান। বেশ খানিকটা পড়ার পর চোখ খুলে দেখেছিল মা আর ওই লোক ছাড়াও আরো একজন এসে সামনে বসেছে। আপনারা হয়তো বুঝতে পারছেন, তৃতীয় সেই লোকটার নাম ক্বারী আমিনুল ইসলাম।
আমিনুল ইসলাম খুলনায় এসেছিলেন একটা অনুষ্ঠানে। তার প্রাক্তন এক ছাত্র খুলনায় মাদরাসা খুলেছে। সেই মাদরাসার উদ্বোধন করতে এসেছিলেন তিনি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে কিছু ছাত্র পেয়েছিলেন তিনি যারা দেশজুড়ে তার খ্যাতি এনে দিয়েছে। কিন্তু এখন আর তেমন ছাত্র পাচ্ছেন কই। বড়লোকের ছেলেপেলেতে ভরে যাচ্ছে তার মাদরাসা কমপ্লেক্স। রমজান মাসে টিভিতে অনুষ্ঠান দেখে সন্তানকে মাদরাসায় ভর্তি করতে নিয়ে আসে বিত্তশালীরা। মাদরাসার ছাত্র বাড়ছে এতে করে কিন্তু এসব ছেলেপেলে সব ফার্মের মুরগি। মুরগি দিয়ে রেস খেলা যায় না। ঢাকায় ফেরার পথে বাস কাউন্টারে বসে বসে এসব ভাবছিলেন আমিনুল ইসলাম, তখনি শুনতে পান সুমধুর তেলাওয়াত ।
এ যেন খোদার বিশেষ দান। ছেলেটার মাখরাজ যেমন স্পষ্ট, লাহানও তেমন সুন্দর। নিজের আসন ছেড়ে তাই ছেলেটার পাশে গিয়ে বসেছিলেন। বাসে উঠার আগে কোরআনের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছোট ছোট প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন তিনি রায়হানকে। সেসব প্রশ্নের ঝটপট উত্তর দিয়েছিল রায়হান, নির্বিকারভাবে। আমিনুল ইসলাম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন বাসে উঠার আগেই। যেভাবেই হোক এই ছেলেকে তিনি নিজের মাদরাসায় নিবেন। এই ছেলেটা হবে তার লম্বা রেসের ঘোড়া। বেশ বড় বড় বাজি খেলতে পারবেন।
ছেলের মাকে রাজি করানো গেলেও ছেলেটা ছিল তার এক কথাতে অনড়। কোথাকার গ্রামের কোনো মুহিব্বুল্লাহ হুজুর আছে, তার কাছে ছাড়া আর কোথাও পড়বে না সে। তবে ছেলেটা মায়ের কথার অবাধ্য হয়নি। এতেই স্বস্তি আমিনুল ইসলামের। চিড়িয়াখানা দেখতে এসে কংক্রিটের এক চিড়িয়াখানায় আটকা পড়ে গিয়েছিল রায়হান। আর কোনোদিন ফিরে যেতে পারেনি সোবহানপুরে, মুহিব্বুল্লাহ হুজুরের কাছে।
আনোয়ারা বেগমের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। ছেলেটা এমন তোতলাচ্ছে কেন! আয় হায় প্রশ্নটার উত্তর দিতে পারছে না কেন রায়হান? সাড়ে তিন লক্ষ কাতারি রিয়াল কী তবে ছুটে যাচ্ছে? আমিন হুজুর একদম প্রথম দিন বাসে বসে আনোয়ারাকে বলেছিল, আপনার ছেলেকে নিয়ে আমি পৃথিবীর প্রতিযোগিতাগুলোতে যাব, ওকে বিশ্বমানের হাফেজ হিসাবে গড়ে তুলতে যা করা লাগবে তাই করব। আমার এসি মাদরাসায় ওর থাকা খাওয়া একদম ফ্রি, কোনো বেতন দেয়া লাগবে না। আনোয়ারা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, আপনি ওর পিছনে এত কেন খরচ করবেন হুজুর? আমিন হুজুর মুচকি হেসে বলেছিল, ও পুরস্কারের টাকা যা পাবে ভবিষৎ এ সেখান থেকে কিছু হয়তো রাখব। আমার কোনো লস হবে না।
আনোয়ারাকে কাতার যাওয়ার আগে রায়হান বলেছিল এই প্রতিযোগিতায় অনেক টাকা দিবে প্রথম হলে। সাড়ে তিন লক্ষ কাতারি রিয়াল। আনোয়ারা গার্মেন্টেসের সুপারভাইজারের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে জেনেছে কাতারের সাড়ে তিন লাখ টাকা, বাংলাদেশের টাকায় দশ লাখ টাকা হয়। আমিন হুজুর কতই বা আর রাখবে। অর্ধেকই রাখুক, তাতেও কিছু আসে যায় না। কিন্তু ছেলেটা তো তোতলাচ্ছে। এ কী কাঁদছে কেন? আসলেই কী কাঁদছে? ওর চোখে কী পানি? চার হাজার কিলোমিটার দূরে বসে কিছুই বুঝতে পারে না আনোয়ারা। বুঝতে না পারাই স্বাভাবিক, আমিনুল ইসলাম চল্লিশ গজ দূরে বসেই কিছু বুঝতে পারেন না। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। তীরে এসে ডুবে যাচ্ছে তরি।
রায়হান কেন তোতলায়? রায়হানের চোখে কী ভাসতে থাকে তখন? রায়হান মূলত একটা দোয়েল পাখির নোট দেখতে পায়। রায়হানের চোখে ভাসতে থাকে সাত পারার ষোলো নম্বর পৃষ্ঠা সবক দেয়ার গল্প। সেদিন বন্ধু জাকিরের সাথে বাজি ধরেছিল সে। যে আগে সবক দিতে পারবে সে দশ টাকা দিবে। সবার আগে ঘুম থেকে উঠে হুজুরের তেপায়ার সামনে রেহাল রেখে সিরিয়াল ধরেছিল রায়হান। ঘুম থেকে সবাইকে উঠানোর সময় রায়হানকে এভাবে দেখে অবাক হন মুহিব্বুল্লাহ হুজুর। কারণ জানতে চাইলে রায়হান জানায় বাজির কথা। হুজুর কিছু না বলে অজু করতে চলে যান। ফিরে এসে সবাইকে জাগান। ক্লাস শুরু হলে সবার আগে রায়হানের সবকটাই শোনেন। তবে সবক শেষ হওয়ার পর তিনি রায়হানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, কখনও টাকার জন্য কোরআন শরিফ পড়বি না। তবে তুই যেদিন এক বসায় পুরো কোরআন শুনাতে পারবি সেদিন আমি তোকে একটা দোয়েল পাখির নোট দিব। পকেট থেকে দুই টাকার চকচকে নোট বের করে এনে বলেছিলেন হুজুর।
ওই নোটটা নাকি বরকতি নোট। হুজুর সবসময় পকেটে রাখেন। কখনও তার টাকার অভাব হয় না। আল্লাহ ব্যবস্থা করেন। দোয়েল পাখির নোটটা নিজের করে নেওয়ার জন্য তারপর বহুরাত জেগেছে রায়হান। হুজুর মাঝেমধ্যেই পকেট থেকে বের করে দেখাতেন। কিন্তু চিড়িয়াখানা দেখতে এসে দোয়েল পাখিটা হারিয়ে ফেলেছে রায়হান।
বারবার নোটটার কথা মনে পড়ে, আর তোতলাতে থাকে সে।
0 Comments