কোটা ফ্যাক্টরি যেমন লাগলো
শেষ কয়েক মিনিট কোন কারণ ছাড়াই হু হু করে কাঁদতে মন চাইলো। শেষদিকে হয়ত চোখ ভিজেও গেলো কিছুটা। কোটা ফ্যাক্টরির আর কোনো সিজন আসবে কিনা, সেখাবে বৈভবের নতুন করে ঘুড়ে দাঁড়ানো বা জিতু ভাইয়ার পলিসি মেকিং দেখাবে কিনা জানি না। তবে এটুক জানি, নতুন পর্ব যদি আসেও এরকম ইমোশন নিয়ে আর দেখার সময় পাবো না। এভাবে চোখের নিচে পানি জমবে না।
কোটা ফ্যাক্টরি প্রথম সিজন যখন দেখেছি তখনও আমি জানতাম না, আগামী ছয় বছর পর আমি কোথায় থাকবো, কী করবো… এখন যখন সিজন থ্রি দেখে শেষ করেছি তখনও জানি না আমার ভবিষ্যত কী। তবে এই দুই সময়ের মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। ‘স্থিরতা’ সেই পার্থক্য এনে দিয়েছে। সেই উনিশ বা একুশ সালে ছিল কেবল অস্থির সময়, অনিশ্চিত সময়। এখনও সময় অনিশ্চিত বটে, তবে অস্থির নয়। মিনা, ভার্তিকা, সিভাঙ্গি, বৈভব, উদয়– এদের প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম আমি। নেটফ্লিক্স আবারো মনে করিয়ে দিলো। কেবল মনে করানো নয়, ঘুরিয়ে নিয়ে আসলো নিজের জীবনের সেইসব দিনগুলো থেকে।
আমি যেন বৈভব আর জিতু ভাইয়া, দুটো চরিত্রই অনুভব করতে পারলাম। স্টুডেন্ট হিসেবে এসব সাকসেস, ফেউলিয়রের মধ্য দিয়ে তো গিয়েছিই। এছাড়াও লাস্ট দুই বছর যাবত এডমিশনের টুকটাক ক্লাসও নিয়েছি। আমি খানিকটা হলেও জানি এট্যাচমেন্ট তৈরি করলে সেটা কিভাবে পীড়া দেয় আর এট্যাচমেন্ট ছাড়া ক্লাস থেকে বের হলে নিজের কাছে কতটা ছোট হয়ে যেতে হয়। আমার স্টুডেন্টদের ভেতর মাত্র দু্জন পাবলিকে চান্স পেয়েছে। একজন ঢাবিতে, আরেকজন জাবি। ঢাবির ছেলেটা আমার এলাকায় থাকে। আমরা এক বাসেই আসা যাওয়া করি। হুটহাট বাসে দেখা হয়ে গেলে ‘স্যার স্যার’ বলে দাঁড়িয়ে যাওয়াটা কেমন যেন লাগে। অদ্ভুত এক অনুভূতি। মনে হয়, আমি কী এই সম্মানের যোগ্য? আদৌ কী সেভাবে পড়িয়েছিলাম?
কোটা ফ্যাক্টরিকে আমি কোনভাবেই আমার জীবন থেকে ইগনোর করতে পারবো না। এডমিশনের সময় জিতু ভাইয়ার ২১ দিনই ছিলো আমার নতুন করে শুরু করার টোটকা। বৈভবের ক্র্যাক না হওয়াটা দেখে অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম প্রথমে। যেভাবে সাসপেন্স তৈরি হচ্ছিল, টিপিক্যাল গল্পের মতো দেখা যাবে বৈভব টপ টেনে ঢুকে গেছে। কিন্তু সেরকমটা হয়নি। বৈভবের ক্র্যাক না হওয়া দেখে লাখ লাখ তরুণ ব্যর্থতাকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে শিখবে। এমনটাই হয়ত চেয়েছে কোটা ফ্যাক্টরি টিম।
শেষ সিজনের ডায়লগ. ক্যারেক্টার ভেভেলপ, সিন টু সিন ব্রেকডাউন অনেক সুন্দর হয়েছে। বিশেষত শেষের দুই এপিসোডের কথা বলতেই হয়।
এই সিজনে ফিলোসফি অনেক বেশি। এখানে ক্লাসরুম থেকে ক্লাসরুমের বাইরের ওয়ার্ল্ডকে বেশি ফোকাস করা হয়েছে। সদা হাসিমুখে থাকা জিতু ভাইয়াদের জীবনেও যে হতাশা থাকে, সারা বছর চিট করতে থাকা উদয়কেও যে ধরা খেতে হয়, টাকার প্রয়োজনে টিউশনের পিছনে ছুটে যে পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যেতে হয় মিনা হয় মিনাকে—এই ছোট ছোট বিষয়গুলা সিজনটাকে পূর্ণতা দিয়েছে।
আমাদের দেশের, আমাদের শহরের এডমিশন জার্নির এমন কোনো গল্প পর্দায় দেখি না কেন? আমি ‘এডমিশন প্যারাডক্স’ নামে একটা গল্প ভেবে রেখেছি, এখনও ভাবছি। দেখা যাক কতদূর যায়।
আমার ইচ্ছা ছিল শেষ সিজনটা উমামার সাথে বসে একসাথে দেখবো। ফার্স্ট এডিসোড কক্সবাজার যাওয়ার পথে কিছুটা একসাথে দেখেছিলাম, এরপর আর দেখা হয়নি। বাকিটা একা একাই শেষ করলাম। প্রথম দুই সিজন দেখার সময় আমরা আর এই আমরা; মাঝখানে কত কত গল্প। যাইহোক, সামনে অনেকদূর যাওয়া বাকি। অনেক গল্প লেখা বাকি। আপাতত তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এখনই শেষ হোক।
0 Comments